কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম। কিডনি নীরবে কাজ করে বলে অনেক সময় রোগ গভীর না হওয়া পর্যন্ত এর উপসর্গগুলি সহজে ধরা পড়ে না। তাই কিডনির কোনো সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব সতর্ক হওয়া জরুরি।
এখানে কিডনির সমস্যা বা কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ৩টি প্রাথমিক এবং প্রধান লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা দেখলে আপনার দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
১. প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন (Changes in Urination)
কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল অপসারণ করে প্রস্রাব তৈরি করা। কিডনি বিপদে থাকলে প্রস্রাবের পরিমাণে ও অভ্যাসে বড় পরিবর্তন আসে: ঘন ঘন প্রস্রাব: বিশেষত রাতের বেলায় ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া। কম বা অতিরিক্ত প্রস্রাব: প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ খুব কমে যাওয়া, অথবা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া। ফেনাযুক্ত বা রক্তযুক্ত প্রস্রাব: প্রস্রাবে মাত্রাতিরিক্ত ফেনা দেখা যাওয়া (প্রোটিন বা অ্যালবুমিন হারানোর কারণে) অথবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। ব্যথা ও চাপ: প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া বা মূত্রাশয়ে চাপ অনুভব করা।
২. শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা বা শোথ (Swelling/Edema)
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ও সোডিয়াম বের হতে পারে না। ফলে এই তরল শরীরে জমা হতে শুরু করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা বা শোথ দেখা যায়। চোখের নিচে ফোলা: কিডনি সমস্যা হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রায়শই চোখের চারপাশ বা মুখমণ্ডল ফোলা দেখায়। হাত ও পায়ে ফোলা: হাত, গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া কিডনি রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ।
৩. ক্লান্তি ও দুর্বলতা (Fatigue and Weakness)
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এর পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর রক্তকণিকা উৎপাদনে কিডনির একটি ভূমিকা রয়েছে (এরিথ্রোপোয়েটিন নামক হরমোন তৈরির মাধ্যমে)। তীব্র ক্লান্তি: সামান্য কাজ করার পরই অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা। কিডনি সমস্যায় রক্তাল্পতা (Anaemia) হতে পারে, যা এই ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। মনোযোগের অভাব: মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া এবং সারাক্ষণ ঝিমুনি অনুভব করা। ঠান্ডা লাগা বা শ্বাসকষ্ট: রক্তাল্পতার কারণে সবসময় শীত অনুভব করা এবং মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলির মধ্যে এক বা একাধিক যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তবে দেরি না করে একজন নেফ্রোলজিস্ট (কিডনি বিশেষজ্ঞ) বা জেনারেল ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা গেলে কিডনিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।
